সুপরিকল্পিত ও সুনির্দিষ্ট
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়েই মহান আল্লাহ্ মানব সৃষ্টি করেছেন । এই প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তায়ালা বলেনঃ
অর্থাৎঃ মহিমান্বিত
তিনি, যিনি সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী, তিনি
সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান, যিনি মৃত্যু ও জীবন তোমাদেরকে পরিক্ষা করার উদ্দেশ্যে
সৃষ্টি করেছেন-কে তোমাদের মাধ্যে কর্মে উত্তম । (আল কুরআন ৬৭,১-২)
অর্থাৎঃ তাঁর
নিকট তোমাদের সকলের প্রত্যাবর্তন, আল্লাহ্র প্রতিশ্রুতি সত্য । সৃষ্টিকে তিনি
অস্তিত্বে আনেন । অতঃপর তার পুনরাবর্তন ঘতান-যারা বিশ্বাসী ও পুণ্যশীল, তাদেরকে
ন্যায়বিচারের সাথে কর্মফল প্রদানের জন্য । আর যারা অবিশ্বাসী, তারা অবিশ্বাস করার
দরুন তাঁদের জন্য রয়েছে অত্যুষ্ণ পানীয় ও মর্মন্তুদ শাস্তি । (আল কুরান-১০,৪)
অর্থাৎঃ যখন তাঁর
আরশ পানির উপর ছিল, তখন তিনিই আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী ছয়দিনে সৃষ্টি করেন, তোমাদের কে
আচরণে শ্রেষ্ঠ, তা পরিক্ষা করার জন্য । (আল কুরান-১১,৭)
উপরিউক্ত আয়াতসমূহ প্রমাণ করে যে, আত্মিক উন্নতির চরম শিখরে উপনীত হওয়ার
সুযোগসুবিধা দিয়েই আল্লাহ্ তায়ালা মানব সৃষ্টি করেছেন এবং আত্মিক উন্নতিই তাঁর
পরম কাম্য । সে নির্জনবাস করবেনা; বরং আত্মিয়-স্বজন, স্বজাতি ও বৃহতর মানব সমাজে
বাস করবে । নিছক ব্যক্তিগত কর্তব্য ছাড়াও আপনজন, বন্ধু-বান্ধব এবং সমগ্র মানব
সমাজের প্রতি তাঁর উপর অর্পিত কর্তব্য তাকে সবসময় পরীক্ষার সম্মুখিন করে রাখবে ।
এই কর্তব্য সম্পাদনের দ্বারাই তাকে মানবজীবনের পরম ও চরম লক্ষ্য, আধ্যাত্মিক
উন্নতি সাধন করতে হবে । এই মানবীয়
কর্তব্যের ব্যপারে কে কতটুকু সাড়া দিতে পারলো, এটা দ্বারাই ব্যক্তির জীবনের সফলতা
ও ব্যর্থতা নিরূপিত হবে ।
উল্লেখিত আয়াতসমূহ থেকে পরিষ্কারভাবে বুঝে আসে যে, যান্ত্রিক উৎকর্ষ,
শিল্প-বানিজ্যে উন্নতি বস্তুসম্ভারের উৎপাদনশীলতা দ্বারা ইসলাম কোন জাতির উন্নতি
বা অবনতি বিচার করে না । কোন জাতি এসকল বিষয়ে চরম উন্নতি লাভ করেও আত্মিক ক্ষেত্রে
পরম দেউলিয়া থেকে যেতে পারে । অপরদিকে জাগতিক ক্ষেত্রে অনুন্নত জাতিও মানবীয়
গুণরাজিতে বিভূষিত হতে পারে । ইসলামে আত্মাকে বাদ দিয়ে জাগতিক উন্নতি একেবারেই
মূল্যহীন ।
পার্থিব উন্নতি ও অগ্রগতিকে ইসলাম নিন্দনীয় বলে না; বরং একে উৎসাহিত করে; তবে
পরকালকে বিসর্জন দিয়ে নয় । মানবীয় সুসম্পর্ক অটুট ও শান্তিপুর্ণ রেখে
দুনিয়া-আখেরাতের কল্যানলাভের পথই ইসলাম প্রদর্শন করে থাকে ।