ইংরেজি শিক্ষার ব্যপারে আলেমগণের ফতওয়া ও ইংরেজি শিক্ষায় মুসলমানদের পশ্চাতে পড়ার কারণ!


ইংরেজি শিক্ষায় মুসলমানদের পশ্চাতে পড়ার কারণ একাধিক ৷ তবে প্রথমে আমরা দেখবো এক শ্রেণীর মানুষ আলেমদের ব্যপারে যে মিথ্যাচার করে যে, আলেমগণের ফতওয়ার কারণে মুসলমানরা ইংরেজি শিক্ষায় পিছিয়ে, সে ব্যপারটা ৷ শিক্ষা তথা পাশ্চাত্য শিক্ষার পশ্চাতে পড়ার কারণ হিসেবে তারা যে অপপ্রচার চালায় এর মূলে কোন সত্য নিহিত আছে কিনা ? এব্যপারে ইতিহাস কি বলে

কিন্তু এরপূর্বে পাক-ভারতে ইংরেজি শিক্ষা সম্পর্কীয় কিছু জরুরী বিষয় আলোচনা করবো ৷ এতে মূল বিষয়ে আলোচনা করা সহজ হবে ৷ 

(ক) ১৭৫৭ খৃষ্ঠাব্দ থেকে ঐ শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত ইংরেজরা ভারতবাসীর শিক্ষার জন্য আদৌ কোন মাথা ঘামান নাই ৷ ১৭৯২ খৃস্টাব্দে সর্বপ্রথম মিঃ অলিভার ভারতবাসীর শিক্ষার জন্য বৃটিশ পার্লামেন্টে এক প্রস্তাব উত্থাপন করেন ৷ কিন্তু কোম্পানির ডাইরেক্টর ও পার্লামেন্ট সদস্যদের বিরোধীতার ফলে তা বাতিল হয় ৷ অতপর ১৭৯৮ খৃষ্টাব্দে স্বয়ং কোম্পানির ডাইরেক্টর চার্লস গ্রান্ট শিক্ষার সমর্থনে এক গ্রন্থ রচনা করেন ৷ ১৮১৩ খৃষ্টাব্দে ভারতবাসী শিক্ষা সম্পর্কে বিবেচনা ও সুপারিশ করার জন্য এক শিক্ষা কমিটি নিয়োজিত হয় ৷ ১৮১৪ খৃষ্টাব্দে কমিটির সুপারিশ অনুসারে ভারতবাসীর শিক্ষার জন্য বড়লাটের নামে এক আদেশ জারি করা হয় এবং এরজন্য বার্ষিক এক লক্ষ টাকা মনজুর করা হয় ৷ 

(খ) সরকারী অর্থ প্রথমে ভারতবাসীর মধ্যে প্রচলিত প্রাচ্য ভাষা ও প্রাচ্য জ্ঞানবিজ্ঞান শিক্ষার জন্যই মনজুর করা হয় ৷ অতপর ১৮৩৫ খৃষ্টাব্দে এই ব্যবস্থার পরিবর্তন করা হয় এবং তা শুধু ইংরেজি ভাষা ও পাশ্চাত্য জ্ঞানবিজ্ঞান শিক্ষার জন্যই নির্দিষ্ট করা হয় ৷ 

( গ ) কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ১৮২৩ খৃস্টাব্দ পর্যন্ত এই অর্থের প্রায় সব এবং ১৮২৩ থেকে ১৮৫৪ পর্যন্ত এর অধিকাংশই মিশনারী স্কুল ও মিশনারী দাতব্য চিকিৎসার নামে খ্রীষ্ট ধর্ম প্রচারার্থেই ব্যয় করা হয় ৷ ১৮৫২ সালে মাদ্রাজের জনসাধারণ মাদ্রাজের গভর্নরের বিরুদ্ধে শিক্ষা খাতের অর্থ মিশনারীর কাজে ব্যয় করছেন বলে পার্লামেন্টে এক অভিযোগ উত্থাপন করে ৷ অতপর ১৮৫৪ সালে শিক্ষা ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতার নীতি ঘোষিত হয় ৷ 

( ঘ ) ১৭৫৭ থেকে ১৮১৩ পর্যন্ত ইংরেজি ভাষা শিক্ষা করা ছিল একান্তই ঐচ্ছিক ব্যপার ৷ শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে এর কোন সম্পর্কই ছিলনা ৷ কেউ শখ করে ইংরেজদের সাথে মেলামেশা করার বা ইংরেজদের কথার তর্জমা করার উদ্দেেশ্যই ইংরেজি শিখতেন ৷ ১৮১৪ সাল থেকে ইংরেজি দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে আমাদের শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রবেশ করে এবং ১৮৩৫ সাল থেকে তা আমাদের শিক্ষার মাধ্যম ও বাধ্যতামুলক বিষয় তথা জাতীয় ব্যপার হয়ে দাঁড়ায় ৷

( ঙ ) নানা কারণে (সে সকল কারণ পরে বিবৃত হবে) প্রায় ১৮৫৭ সাল পর্যন্ত ইংরেজি শিক্ষা ক্ষেত্রে মুসলমানদের পুরোপুরিভাবে প্রবেশ লাভ সম্ভবপর হয়নি ৷ ১৮৫৭ সালে স্যার সৈয়দ আহমদ মুসলমানদের শিক্ষার জন্য আলীগড়ে একটি ইংরেজি বিদ্যালয় ( ১৮৭৮ সালে তা কলেজ ও ১৯২০ সালে তা বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হয়) স্থাপন করেন ৷ অতপর তাঁর ও তাঁর সহকর্মীদের প্রচেষ্টা ও উৎসাহে মুসলমানগণ ইংরেজি শিক্ষাক্ষেত্রে প্রবেশ করতে শুরু করে ৷ 

( চ ) ইংরেজি শিক্ষার দুটি দিক আছে ৷ ইংরেজি ভাষা শিক্ষা ও বিষয় শিক্ষা ৷ আলেমগণের কাছে শুধু ভাষা শিক্ষার ফতওয়া চাওয়া হয়েছিল, বিষয় শিক্ষা সম্পর্কে নয় ৷ 

এই সংক্ষিপ্ত আলোচনার পর এখন আমরা দেখবো যে,ইংরেজি ভাষা শিক্ষা সম্পর্কে আলেমগণ কি ফতওয়া দিয়েছিলেন

ইংরেজি শিক্ষা প্রবর্তনের প্রথম যুগে সে সকল আলেম ফতওয়ার ব্যপারে প্রসিদ্ধ ছিলেন, তাদের সকল ফতওয়াই নিয়মিতভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে এবং পরে কিতাব আকারে প্রকাশিত হয়েছে ৷ সে সকল ফতওয়ার কিতাব অনুসন্ধান করে আমরা যা পেয়েছি তা নিম্নে তুলে ধরা হলো ৷ 


( ১ ) শাহ আব্দুল আজীজ দেহলভী রহ এর ফতওয়া ৷ 
( ১৭৪৫-১৮২৩ খ্রীষ্টাব্দ) 
শাহ সাহেব শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভী রহ এর জ্যেষ্ঠ পুত্র ৷ তিনি েতিনি যুগ থেকে আজ পর্যন্ত সকল শ্রেণীর আলেমগণেরই শীর্ষস্থানীয় ৷ ড. হান্টার তাঁকে ' শামছুল হিন্দ ' বা ভারতরবি নামে উল্লেখ করেছেন ৷ কিতাবে তার পূর্ণ ফতওয়ার বিবরণ দেয়া হয়েছে ৷ 
تعلیم انگیریزی یعنی ائین خط وکتابت ولغت واصطلاح اینھا را داستن باکے ندارد، اگر یہ نیت مبح باشد زیراکہ در حدیث وارداست کہ زیدبن ثابت رضی اللہ عنہ بحکم آحضرت صلی اللہ علیہ وسلم روش خط و کتابت یہود و نصاری ولغت آنھار آموختہ بود برائے این عرض کہ اگر برائے آحضرت صلی اللہ علیہ وسلم خط باین لغت ورستم خط می رسد جواب ان تواند نوشت واگر بمجرد خوش امد آنھا واختلاط! بانھا تعلم این لغت نماید باید- باین وسیلہ پیش آنھا تقرب جوید پش البتہ حرمت و کراہت دارد وقدم آنفا ان للالہ حکم ذی الآلہ-( فتاوی عزیزی جلد اول ص ۱۹۵ ) 
ইংরেজি পড়া অর্থাৎ এর অক্ষর চিনা, তা লেখা এবং এর অভিধান ও পরিভাষা জ্ঞাত হওয়াতে কোনও দোষ নেই, যদি শুধু মুবাহ মনে করে শিক্ষা করে ৷ কেননা হাদীস শরীফে আছে, রাসুল সা এর আদেশে সাহাবী যায়দ বিন সাবিত র. ইয়াহুদী ও নাসারাদের ভাষা এবং তা লেখর পদ্ধতি শিক্ষা করেছিলেন - যাতে তিনি রাসুল সা এর কাছে ইয়াহুদী ও নাসারাদের পক্ষ থেকে আগত চিঠির জবাব লিখতে পারেন ৷ 
পক্ষান্তরে যদি কেউ শুধু তাদের ( ইংরেজদের) খোশামোধী করার উদ্দেশে অথবা এর দ্বারা তাদের সাথে মেলামেশা করে তাদের নৈকট্য লাভের উদ্দেশে শিক্ষা করে তাহলে তা শিক্ষা করা হারাম বা মাকরুহ ৷ কারণ পূর্বেই বলা হয়েছে যে, আসল জিনিসের যে হুকুম তার সহায়ক জিনিসেরও একই হুকুম ৷ আর আসল জিনিস অর্থাৎ তাদের খোশামোদী করা ও নৈকট্য লাভ হারাম বা মাকরুহ ৷ 
( ফতওয়ায়ে আজীজী: ১/১৯৫)


মাওলানা রশীদ আহমদ গঙ্গুহী রহ এর ফতওয়া ৷ 
(১৮২৮-১৯০৫) 
( ﺳﻮﺍﻝ ( ﺍﻧﮕﺮﯾﺰﯼ ﭘﮍﮬﻨﺎ ﺍﻭﺭ ﭘﮍﮬﺎﻧﺎ ﺩﺭﺳﺖ ﮨﯿﯽ ﯾﺎ ﻧﮩﯿﯽ؟ 
) ﺟﻮﺍﺏ ( ﺍﻧﮕﺮﯾﺰﯼ ﺯﺑﺎﻥ ﺳﮑﮭﻨﺎ ﺩﺭﺳﺖ ﮨﯿﯽ ﯾﮧ ﺷﺮﻁ ﮐﮧ 
ﮐﻮﺋﯽ ﻣﻌﺼﯿﺖ ﮐﺎ ﻣﺮﺗﮑﺐ ﻧﮧ ﮨﻮ ﺍﻭﺭ ﻧﻘﺼﺎﻥ ﺩﯾﻦ ﻣﯿﯽ ﺍﺱ 
ﮐﮯ ﻧﮧ ﺁﻭﮮ - ) ﻓﺘﺎﻭﯼ ﺭﺷﯿﺪﯼ ﺹ۴۶۶
প্রশ্নঃ ইংরেজি শিক্ষা করা ও শিক্ষা দেয়া দুরস্ত আছে কিনা?
 
উত্তরঃ ইংরেজি ভাষা শিক্ষা করা দুরস্ত আছে, যদি শিক্ষার্থী এর দ্বারা কোন গুনাহে লিপ্ত না হয় বা এর দ্বারা শরীয়তের কোন ক্ষতি না হয় ৷ 
(ফতওয়ায়ে রশীদী,পৃ:৪৬৬)


মাওলানা আঃ হাই লক্ষ্নৌবীর ফতওয়া ৷ 
( ১৮৪৭-১৮৮৬) 
( ﺳﻮﺍﻝ ( ﺁﻣﻮﺧﺘﻦ ﻋﻠﻢ ﺍﻧﮕﺮﯾﺰﯼ ﭼﮧ ﺣﮑﻢ ﺩﺍﺭﺩ؟ 
)ﺟﻮﺍﺏ ( ﺗﻌﻠﻢ ﻟﻐﺖ ﺍﻧﮕﺮﯾﺰﯼ ﻭﺁﻣﻮﺧﺘﻦ ﻃﺮﯾﻖ ﺧﻂ 
ﻭﮐﺘﺎﺑﺖ ﺁﮞ ﺍﮔﺮ ﻣﺸﺒﺎﺑﮩﺖ ﻭﻣﺤﺒﺖ ﻭﮦ ﺩﺍﺩ ﺍﻧﮕﺮﯾﺰﯼ ﺑﺎﺷﺪ 
ﻣﻤﻨﻮﻉ ﺍﺳﺖ. ﻭﺍﮔﺮ ﺑﻔﺮﺽ ﺍﻃﻼﻉ ﺑﺮ ﻣﻀﺎﻣﯿﻦ ﮐﻼﻡ 
ﺍﯾﺸﺎﻥ ﯾﺎ ﺧﻮﺍﻧﺪﻥ ﺧﻄﻮﻁ ﺍﯾﺸﺎﻥ ﺑﺎﺷﺪ ﻣﻀﺎﯾﻘﮧ ﻧﺪﺍﺭﺩ
ﻭﺩﺭ ﺣﺪﯾﺚ ﻣﺸﮑﻮﺍﺕ ﺷﺮﯾﻒ ﺍﻭﺭﺩﮦ ﮐﮧ ﺁﻧﺤﻀﺮﺕ ﺳﻠﯽ 
ﺍﻟﻠﮧ ﻋﻠﯿﮧ ﻭﺳﻠﻢ ﺯﯾﺪﺑﻦ ﺛﺎﺑﺖ ﺭﺍ ﺗﻌﻠﻢ ﺧﻂ ﯾﮩﻮﺩ ﺍﻣﺮ 
ﻓﺮﻣﻮﺩﻧﺪ ﻭﺯﯾﺪﺑﻦ ﺛﺎﺑﺖ ﺁﮞ ﺭﺍ ﺑﻌﺮﺻۂ ﻗﺮﯾﺐ ﺍﻣﻮﺧﺘﻨﺪ
) ﺍﺑﻮ ﺣﺴﻨﺎﺕ ﻣﺤﻤﺪ ﻋﺒﺪﺍﻟﺤﯽ ﻣﺠﻤﻮﻋﮧ ﻓﺘﺎﻭﯼ ﺟﻠﺪ۳ 
۲۰
প্রশ্নঃ ইংরেজি শিক্ষা করা কি অনুচিত

উত্তরঃ ইংরেজি শিক্ষা করা ও এবং তা লেখার পদ্ধতি আয়ত্ব 
করা যদি ইংরেজদের অনুকরণ বা তাদের মুহাব্বত ও ভালোবাসার উদ্দেশে হয়, তাহলে তা নিষিদ্ধ ৷ আর যদি তাদের কথার মর্ম বুঝা বা তাদের পত্রাদি পড়ার উদ্দেশে হয়, তাহলে তাতে কোন ক্ষতি নেই ৷ কেননা রাসুল সা হযরত যায়েদ বিন 
ছাবিত রা কে ইহুদিদের লেখা শেখার নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং হযরত যায়েদ রা অল্প সময়ে তা শিখে ছিলেন ৷ (মুজমুয়ায়ে ফতওয়া, খ-৩ পৃ: ২০) এসকল ফতওয়া দ্বারা বুঝা গেলো যে
যে যুগে আলেমগণ ইংরেজের বিরুদ্ধে ফতওয়া দিলে ইংরেজি শিক্ষার ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা ছিলোসে যুগের প্রসিদ্ধ আলেমগণ সকলে এর স্বপক্ষেই ফতওয়া দিয়েছেন ৷ অবশ্য ইংরেজ আমলের শেষের দিকে (১৯৩৫-১৯৪৩ খ্রীস্টাব্দে) মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রহ এর বিরুদ্ধে ফতওয়া দিয়েছিলেন ৷ তা তিনি ইংরেজি শিক্ষার পরিণামের প্রতি লক্ষ্য রেখেই মুসলমান যুবকদেরকে ইংরেজ তথা পাশ্চাত্যের মানসিক গোলামী থেকে মুক্তি লাভে প্রেরণা দান বা মুসলমান জাতিকে আত্মসচেতন করে তোলার জন্যই এমনটা বলেছেন ৷ সুতরাং যারা প্রচার করে যেআলেমগণের ফতওয়ার কারণে মুসলমানগণ ইংরেজি শিক্ষায় পশ্চাতে পড়েছে (বা যারা একথা বলে সুখ পায় যে হুজুররা ইংরেজি শিক্ষার বিরুদ্ধে ফতওয়া দেয়, আবার নিজেরাই শিখে) তাদের মূলে কোন সত্যতা নেই, এমন বলাটা তাদের 
ইতিহাস সম্পর্কে অজ্ঞতাপ্রসূত বা আলেমগণের প্রতি বিদ্বেষ প্রসূত ধারণা বৈ কিছুই নয়৷ 

এখন প্রশ্ন হলো যে, তাহলে ইংরেজি শিক্ষায় মুসলমানদের পশ্চাতে পড়ার কারণ কি? এর কারণ একাধিক ৷ 
নিম্নে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ উল্লেখ করা হলো ৷ 

১. #প্রথম কারণ হলো মুসলমানদের খোদদারী বা আত্মমর্যাদাবোধ
প্রায় সাত শত বছর রাজত্ব করার পর সিংহাসনচ্যুত হওয়া মাত্রই বিনা দ্বিধায় নিজেদের শিক্ষা ও সভ্যতাকে বিসর্জন দিয়ে অন্যদের শিক্ষা ও সভ্যতাকে গ্রহন করবে- এমন মানসিক অধঃপতন তখনও তাদের হয়নি ৷ লিয়াকত আলী খাঁ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পূর্বে এমনটাই বলেছিলেন ৷ 

ড. হান্টারও মুসলমানদের দুরাবস্থার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে এরূপই বলেছেন যে, " বিগত পঁচাত্তর বৎসর হইতে বাংলার সম্ভ্রান্ত পরিবারবর্গ হয় ধরাপৃষ্ঠ হইতে একেবারে মুছে গিয়াছে - না হয় সেই সকল লোকের তুলনায় নিতান্ত নগণ্য, যাহাদেরকে আমাদের সরকার উপরে উঠাইতেছে ৷ তথাপি তাহাদের অবাধ্যতা ও অলসতার কোনরূপ পরিবর্তন সাধিত হয় নাই, হইবে কি করিয়া তাহারা তো নওয়াব ও বিজয়ীদের বংশধর ৷" (হামারে হিন্দুস্তানি মুসলমান: পৃ: ২০) 

আরাক জায়গায় মুসলমানদের জন্য আক্ষেপ করে বলেছেন, ' যদি মুসলমানদের সামান্য বুদ্ধি বিবেচনা থাকিত, তাহা হইলে তাহারা তাহাদের ভাগ্যের উপর সন্তুষ্ট থাকিত এবং পরিবর্তিত অবস্থার সহিত নিজেদের খাপ-খাওয়াইয়া লইত ৷ কিন্তু তাহা কি হয়, একটা পুরাতন বিজয়ী জাতি কি সহজে নিজেদের অতীত গৌরবময় ঐতিহ্যকে ভুলিয়া যাইতে পারে?' ( হামারে হিন্দুস্থানী মুসলমান: পৃ: ২৫৭) 

অতএব মূলকথা হলো এই যে, যারা মনে করে যে, তৎকালিন মুসলমানগণ তাড়াতাড়ি ইংরেজি শিক্ষায় মনোনিবেশ না করে বড়ই বোকামি করেছেন, তারা আর যাইহোকনা কেন মানব প্রকৃতির ব্যপারে একেবারেই অজ্ঞ ৷